Header Ads

গৃহহীন, পিতৃহীন পরিবার, মেয়ে হবে ডাক্তার!

 গৃহহীন, পিতৃহীন পরিবার,  মেয়ে হবে ডাক্তার!                   

হ্যাঁ, যা পড়েছেন তা বাস্তব সত্য। এই বাংলাদেশে নিজেদের এক টুকরো থাকার জায়গা না থাকার পরেও, বাবাকে অল্প বয়সে হারানোর পরেও যে মেয়েটা নিজের স্বপ্ন ছোঁয়ার অটল সংগ্রামে বছরের পর বছর সঁপে দিয়েছে তাঁর নাম আঁখি রাণী তালুকদার! 








মেয়ের বাড়ি?


মেয়ের কোনো বাড়ি নাই, নাই তাঁর পরিবারেরও।


আঁখি-রা তিন ভাই-বোন। বাবা ছিলেন চা-বিক্রেতা। বাড়ি ছিল সুনামগঞ্জে। দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তির উপায় পড়াশোনা - বাবা এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সন্তানদেরকে যেভাবেই হোক পড়াশোনা করাতে চেষ্টা করেন। আঁখির কথায়, "তাঁর বাবা বলতেন, জীবনে যত কষ্টই হোক, পড়াশোনা করতে হবে। অনেক বড় হতে হবে জীবনে!"


তাঁরা স্কুলে ভালো রেজাল্টও করতেছিল। PSC-তে জিপিএ ৫ পাওয়ার পর তাঁর বাবার চোখেমুখে কি খুশি! আঁখিও যেনো সবচেয়ে বেশি খুশি বাবার মুখের সেই হাসি দেখে। 


সৃষ্টিকর্তার এই হাসিখুশি খুব একটা হয়তো পছন্দ হয় নি। আঁখি অষ্টম শ্রেণিতে JSC পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এমন সময় তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে কোনো লোন চেয়েও পায় নি তাঁরা। বাধ্য হয়ে বসতভিটা বিক্রি করে দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁরা। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দু'টো কিডনী ড্যামেজ হয়ে বাবা মৃত্যুবরণ করেন। 


সাথে যেনো হয়ে যায় পুরো পরিবারের স্বপ্নেরও মৃত্যু!


পিতাকে/কর্তাকে হারিয়ে শোকের বিলাপ করবে, এই সময়টুকুও আঁখি পেল না। নেই বসতভিটা, থাকবে কোথায়? 


এদিকে বসতে হবে JSC পরীক্ষায়। পড়াশোনা করে বড় হতে হবে না! এদিকে তাঁর বড় বোনও একটা ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। ছোট ভাই প্রাইমারী স্কুলে। 


এই অবস্থায় ভরণপোষণ এর সাময়িক দায়িত্ব নেন তাঁর এক জেঠু, কিন্তু পড়াশোনা বাদে। আঁখি তবুও হাল ছাড়বে না। সে পরীক্ষা দিল। এবং যথারীতি আবারো জিপিএ ৫!


তিন ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ যোগানোর জন্য আঁখি নবম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় সেই গ্রামের বাড়িতেই টিউশনি শুরু করে। সময় গড়িয়ে এলো SSC পরীক্ষা।   


পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যে হঠাত তাঁদের পরিবারকে সেই বাড়ি থেকে বের করে দিল সেই রক্তের সম্পর্কের মানুষটা! আঁখির পরীক্ষা চলছে! এক প্রতিবেশি তখন পরীক্ষাটা চালিয়ে নেয়ার জন্য কিছুদিন আশ্রয় দিলেন তাঁদের।


এসএসসি পরীক্ষা শেষে তাঁরা একটা ভাড়া বাসায় উঠলো। কিছুদিন এর মধ্যে SSC এর রেজাল্ট বের হলো। এবং এবারো সে যথারীতি জিপিএ ৫ পেলো!


এরপর? এইচএসসি?


নিজেদের জীবন বাঁচাবে? নাকি নিরাপত্তা? নাকি পড়াশোনা?


বাসা ভাড়া, মাসিক খরচ, এবং বড় বোন ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা, সবকিছুর দায়িত্ব আঁখি নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়! প্রতিদিন ১০-১১ ঘন্টা করে টিউশনি। মাস শেষে কেউ দেয় ৫০০ টাকা, কেউ বা ১০০০ টাকা। তবুও সংসার তো চলছে! জীবনে-প্রাণে বেঁচে আছে সবাই! মহাসাগরে ঝড় উঠলে সাগরের ঢেউ আর তখন উপভোগের বিষয় হয় না, হয়ে যায় যম! 


এসএসসি-র ভালো রেজাল্ট এর কারণে সিলেট সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারলেও টানা ৮ মাস সে কলেজে যাওয়ার সুযোগ পায় নি। বড় বোন ডিপ্লোমা পাশ করে ইতিমধ্যে। ছোট একটা চাকরিও হয়। এরপর আঁখি নামে তাঁর পড়াশোনা করে মুক্তির সংগ্রামে! 


এতটা দিন পর ক্লাশ শুরুর পরেও আঁখি কলেজে সেরাদের মধ্যে স্থান করে নেয়, এইচএসসি-তে জিপিএ পায় আবারো ৫/৫!!!


এরপর আসলো ভর্তিযুদ্ধ! কোন লাইনে ভর্তির জন্য পড়বে সে? 


আঁখির কথায়, "বাবাকে হারানোর তীব্র কষ্ট থেকে আমার ভিতরে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নের জন্ম হয়! আমাকে লড়াই করতে হবে, যেভাবেই হোক ডাক্তার হতে হবে! রাতে বাবার পাশে বসে পড়ার অভ্যেস ছিল আমার। তাঁর মৃত্যুর পর যখনই পড়তে বসেছি, তখনই কান্না করেছি!"


বোঝাই যাচ্ছে, আঁখির যুদ্ধ তখনো শেষ হয় নি, বরং নতুন শুরুর অপেক্ষা। সব জিপিএ ৫, আত্মবিশ্বাসী সে। কিন্তু প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সে মেডিকেল, ডেন্টাল কোথাও চেন্স পেলো না!


আঁখিও ছাড়ার পাত্র নয়, চান্স এখনো শেষ হয়ে যায় নি। সুযোগ যখন আছে, আবার প্রস্তুতি নিতে তো হবেই, আমাকে যে ডাক্তার হতেই হবে।


এবার আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! আঁখি এবার ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় মূল মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সামনে মাইগ্রেশনে হয়ত সিলেটে চলে আসবে, যেখান থেকে তাঁর বাবা অনন্ত যাত্রায় পাড়ি দিয়েছিলেন!


গতকাল কথা হয় আঁখির সাথে, তাঁর বড় বোন কাজলের সাথে। পরিবারের সবাই মহানন্দে আত্মহারা! বড় বোন অকপটে বললেন, তাঁর ছোট এই বোনটির কারণে পুরো পরিবারের প্রায় মৃত স্বপ্ন যেনো আবার ধরা দিয়েছে! আঁখির মেডিকেল ভর্তি যেনো তাঁদের কাছে এই পার্থিব জগতেই স্বর্গকে ছোঁয়া। কারণ, সেখানে যে আছে তাঁর চা-বিক্রেতা বাবা, যিনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এই বলে 'পড়াশোনাই মুক্তির পথ, যেভাবেই হোক পড়াশোনা করতে হবে!'  




গৃহহীন, পিতৃহীন আঁখি সবাইকে নিয়ে মুক্তির নতুন যাত্রায়, নতুন স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু করলো তাঁর এই সাফল্যের মাধ্যমে!


[আঁখি গত পরশু মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। তাঁরা এখনো সংগ্রাম করছে। বড় বোনের ছোট চাকরি, ভাড়া বাসায় সবাই থাকা কোনো রকমে চলে। মেডিকেলে ভর্তি, পড়াশোনা এগুলো এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। দৈবক্রমে আমাদের ফাউন্ডেশন এর Razu Ahmed এর মাধ্যমে আঁখির সাথে আমাদের পরিচয়। ভর্তির ডেডলাইন এর দিন (গত পরশু) আমরা তাঁকে আংশিক এককালীন ভর্তি ফি স্টাইপেন্ড দিয়ে ভর্তি করি। সামনে মাসিক বৃত্তির দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি!]


শিক্ষার্থীদের পাশে, স্বপ্ন পূরণে


Admin
Chandra Nath dada




কোন মন্তব্য নেই

thanks you

Blogger দ্বারা পরিচালিত.